হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের পিটুনিতে রক্তাক্ত হন নরওয়ে প্রবাসী। সেই সঙ্গে উল্টো তাকেই গুনতে হয়েছে জরিমানা।
বুধবার গভীর রাতে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করে তাকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক সুফিয়ানের মোবাইল কোর্ট নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনকে জরিমানা করেন।
জানা যায়, তার বিরুদ্ধে ১৯৮০ দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তার কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, রাত সোয়া ৯টার দিকে নরওয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের ২ নম্বর ক্যানোপি গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন। গেট সংলগ্ন ডান পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় এক এভসেক সদস্যের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে এই যাত্রী উত্তেজিত হয়ে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে ধাক্কা দেন। এর পরপরই অন্যান্য এভসেক ও আনসার সদস্যরা সাঈদকে কনকর্স হলের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় সাত-আট জন মিলে তাকে বেদম মারপিট করে। এতে করে সাঈদের মাথা-মুখ ফেটে রক্তাক্ত হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে সাঈদ বেরিয়ে আসলে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এভসেক সদস্যরা তাকেসহ তার আত্মীয়স্বজন সবাইকে আবারও ভেতরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মারপিটের শিকার যাত্রীর রক্তমাখা শরীর ও কথা কাটাকাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও দেখে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।
ভিডিওতে মারপিটের শিকার ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, ‘আপনারা পাঁচ-ছয় জন ধরে আমাকে মারছেন।’ তার পাশে থাকা এভসেক সদস্য বলছেন, ‘আমাকে ধাক্কা দিলেন। আমি কি সাধারণ মানুষ? আমার ইউনিফর্ম আছে।’ তখন আহত ব্যক্তিটি বলছেন, ‘আমার কথা শোনেন ভাইয়া, আমি (ধাক্কা) দেইনি।’
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম লিখিত আকারে তার বক্তব্যে আহত যাত্রীর নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘রাত সোয়া ৯টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনী ক্যানোপি-২ এর সামনে দুজন যাত্রীর কর্তৃক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাঁচ জন আগমনী যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে ক্যনোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ গেটের ঠিক সম্মুখভাগে অবস্থান করলে সব আগমনী যাত্রীর জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ওই সময় ওই এলাকায় সম্মানিত আগমনী যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মী বিনীতভাবে উক্ত যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষণ পরে উক্ত নিরাপত্তা কর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় উক্ত নিরাপত্তা কর্মীকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় সেখানে নিয়োজিত আরও একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে ওই যাত্রীর ছেলে (একই ফ্লাইটের যাত্রী, যিনি পেছনে অবস্থান করছিলেন) ঘটনাস্থলে এসে বিমান বাহিনীর ওই নিরাপত্তা কর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিলঘুষি মারা শুরু করলে তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তা কর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে নিয়োজিত আনসার এবং এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে আসলে ওই নিরাপত্তা কর্মীদের উল্লেখিত দুজন যাত্রীর হাত থেকে মুক্ত করা হয়।’
এদিকে নাম গোপন রাখার শর্তে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীরা দীর্ঘ যাত্রার পর বিমানবন্দরে নেমেই আত্মীয়স্বজনদের কাছে যেতে ব্যস্ত হয়ে থাকেন। তাড়াহুড়ায় অনেক সময় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেন তারা। কিন্তু একজন কর্মকর্তা সেগুলো আমলে না নিয়ে তাকে সুন্দরভাবে বের করে দেওয়াটাই মুন্সিয়ানা।’
প্রবাসীর মারধরের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন প্রবাসীর জন্য দেশে ফিরে বিমানবন্দরে মারপিটের শিকার হওয়ার চেয়ে জন্য লজ্জা ও অপমান আর কী হতে পারে! শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন।’